এখন থেকে কেবল ইকোনমিক জোনে স্থাপিত শিল্প কারখানায় দ্রুত বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘যেখানে-সেখানে শিল্প-কারখানা করার জন্যই লোড সমস্যা হচ্ছে। ইকোনমিক জোন ছাড়া অন্য কোথাও শিল্প-কারখানা স্থাপন করলে সেখানে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ নয়।’ মঙ্গলবার ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ডেইলি সান-এর গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ হবে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ। সেবা নিয়ে সংস্থাগুলো জনগণের কাছে যাবে, জনগণের সেবার জন্য আসতে হবে না।’
বাংলাদেশে জ্বালানি নিরাপত্তার উপকরণগুলো ব্যাখ্যা করে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে নসরুল হামিদ বলেন, ‘উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। চীন কম্বোডিয়াও বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ রফতানি করতে চাচ্ছে। জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে নেপাল, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে চলছে। ক্লিন ও গ্রিন এনার্জি সরবরাহে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। বেইজ লোড, ইন্টারমিডিয়েট লোড ও পিক লোডের জন্য আলাদাভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। শহর ও শহরতলিতে সাবস্টেশন ও কেবল (তার) ভূগর্ভস্থ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সব উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গেই পরিবশেকে সম্পৃক্ত রাখা হয়েছে।’ এ সময় তিনি সবাইকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান।
ডেইলি সান পত্রিকার সম্পাদক এনামুল হকের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী সম্পাদক শিহাবুর রহমান এর সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যের মাঝে আরইবি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মইনউদ্দিন, বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তামিম, বিআইএফপিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল কান্তি ভট্টাচার্য, এফবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, ডিসিসিআই এর সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের কারখানাগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। কোনও সরকার কখনও চিন্তা করেনি যে, কারখানাও পরিকল্পিতভাবে করা যায়। তবে বর্তমান সরকার সে বিষয়ে চিন্তা করে ১০৮টি ইকোনমিক জোন গড়ে তুলেছে। আমাদের টার্গেট হলো আগামীতে এলএনজি আসছে, নতুন যে গ্যাস গ্রিডে যাবে, তা আমরা শুধু ইকোনমিক জোনে দেবো। এর বাইরে নতুন কোনও গ্যাস দেবো না।’
কারখানা মালিকদেও উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী এপ্রিল থেকে নতুন সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু হবে। যা এখন বন্ধ রয়েছে।’ পরিকল্পিতভাবে কারখানা গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যেখানে-সেখানে স্থাপিত কলকারখানায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ এতে সিস্টেম লস বেড়ে যাচ্ছে এবং অপরিকল্পিতভাবে বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। এটা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত করছে। আমরা চাই উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও যেন এক সেকেন্ডের জন্য বিদ্যুৎ না যায়।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘দেখা যায় ২/৩ কিলোমিটার দূরে অপরিকল্পিতভাবে একেকটি কারখানা গড়ে ওঠে। পরে ওই লাইন থেকে ২/৩ বছরের মধ্যে আরও কয়েকটি কারখানা গড়ে ওঠে। যে কারণে গ্যাস বিদ্যুৎ পাওয়ার ক্ষেত্রে চাপ কমাসহ নানা সমস্যা হয়। তবে এ কারখানাগুলো যদি ইকোনমিক জোনে হতো তবে এ সমস্যা হতো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বড় বড় প্রকল্পগুলোর কাজ চলছে। ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সরকার শিল্প-কারখানাগুলোতে এনার্জি অডিটিং (জ্বালানি নিরীক্ষা) করার পরিকল্পনা নিয়েছে। যার মাধ্যমে জানতে পারবে কোনও কারখানা কতটা সুচারুভাবে (ইফেসিয়েন্টলি) জ্বালানি ব্যবহার করছে।’
‘এনার্জি সিকিউরিটি অ্যান্ড ভিশন ২০৪১’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন।
অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআিইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ-এর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল্লাহ, বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি গোলাম রাব্বানী, বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল কান্তি ভট্টাচার্য, রূপান্তরিত প্রকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবুল কাশেম, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সদস্য মো ফখরুজ্জামান ও পরিচালক কাজী আবসার উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নায়ন বোর্ড (পিডিবি) চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।