নিজস্ব প্রতিবেদক : যারা লকডাউনের পক্ষে বলে দেশের অর্থনীতিকে আরো ক্ষতিগ্রস্থ করতে চায় এবং দেশের মানুষকে আতঙ্কগ্রস্থ করতে চায়, তাদেরকে আইনের আওতায় আনার আহবান জানিয়েছেন দেশের ৫০০ বিশিষ্ট নাগরিক। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি রক্ষায় আর কোন প্রকার লকডাউন না দিয়ে পণ্য আমদানীর পরিবর্তে রপ্তানীমুখী নীতি গ্রহণেরও আহবান জানিয়েছেন তারা। গতকাল গণমাধ্যমের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে তারা কথা বলেন, “করোনা ভাইরাস ১৯৩০ সালে আবিষ্কৃত পুরাতন একটি ভাইরাস। যা মানুষের স্বাভাবিক সর্দি, ঠাণ্ডা, জ্বর হওয়ার জন্য দায়ী। গত ২০১৯ সালের শেষ দিকে ভাইরাসটির একটি নতুন স্ট্রেইনের আগমন ঘটে, যা শীত প্রধান দেশগুলোতে ব্যাপকহারে মৃত্যু ঘটায়। যদিও তা গরম বা নাতিশীতোষ্ণ দেশগুলোতে তেমন মৃত্যু ঘটাতে পারেনি এবং ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়েই সিংহভাগ মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছে।
কিন্তু একটি অতি উৎসাহী মহল এই রোগটি নিয়ে অতিআতঙ্ক ছড়িয়ে চলেছে, যা তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহের উদ্রেগ করেছে। বিশেষ করে, এ মহলটি মানুষের মধ্যে নানা প্রকার গুজব ছড়িয়ে করোনাকে এমন ভয়ঙ্কর রোগ হিসেবে প্রচার করেছে যে, “করোনার অপর নাম মৃত্যু”। তাদের এমন গুজবের কারণে করোনা ভীতির কারণে অনেক মানুষ আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ সম্প্রতি গুজব ছড়ায় যে, ‘বাংলাদেশে শুধু ঢাকায়ই সাড়ে ৭ লাখ আক্রান্ত হয়েছে।’ আইইডিসিআর এই নিউজের প্রতিবাদও জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বক্তারা আরো বলেন, জনগণের উপর লকডাউন, সোশ্যাল ডিসটেন্সসহ নানা ধরনের ভ্রান্ত নিয়ম নীতি চাপিয়ে দিচ্ছে, যা করোনা ভাইরাস নামক রোগের মোটেও গ্রহণযোগ্য কোন চিকিৎসা নয়। বলাবাহুল্য এইসব ভ্রান্ত নিয়মনীতি পালন করতে গিয়ে জনগণ অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, এসব অপপ্রচারকারীদের অতি আতঙ্কের কারণে অনেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়ে স্ট্রোকের ঘটনাও ঘটছে।
করোনাভীতি ছড়িয়ে জনগণ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে –
১) ৬৫ দিন লকডাউন বা সাধারণ ছুটির কারণে আমরা দ্বীনি, অর্থনৈতিক, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। খুব সামান্য সময়ের ব্যবধানে এই ক্ষতি পোষানো সম্ভব নয়।
২) লকডাউন দিয়েও অনেক দেশ করোনায় মৃত্যুহার কমাতে পারেনি। উদাহরণ- আমেরিকা, ইতালি, স্পেন, জার্মানি। তাহলে লকডাউন কিভাবে করোনার সমাধান হতে পারে? অপরদিকে, লকডাউন না দিয়েও সুইডেন মৃত্যুহারে (প্রতি মিলিয়ন জনসংখ্যায়) সপ্তম। তার আগের ৬টি রাষ্ট্র লকডাউন দিয়েও মৃত্যুর গতি থামাতে পারেনি। পাশাপাশি তাইওয়ানও লকডাউন না দিয়ে মৃত্যুহার সামান্য।
৩) মহামারী হলো, মহা আকারে মারী (মৃত্যু)। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিদিন করোনা ভাইরাসের নামে ৩০-৪০ জনের মৃত্যু কখনই প্রমাণ করে না করোনা মহামারী তৈরী করেছে। অথচ প্রতিদিন বাংলাদেশে স্বাভাবিক মৃত্যুর হার প্রায় আড়াই হাজারের মত। উপরন্তু এই ৩০-৪০ জনের অধিকাংশ বার্ধক্যজনিত ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় মৃত্যুবরণ করেছে।
৪) একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করোনা নিয়ে ভীতি তৈরী করছে এবং লকডাউন দিয়ে জীবন-জীবিকা স্থবির করে দিতে চাইছে।
৫) অতিরিক্ত করোনা ভীতির কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে এবং করোনা ভিন্ন অন্য রোগে আক্রান্তরা চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করছে ।
৬) লকডাউনের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এতে বহু লোক চাকুরী হারিয়ে বেকার জীবন যাপন করছে। বাংলাদেশের জিডিপি’র মারাত্মক পতন ঘটেছে। রোজা ও ঈদের বাজার ধরতে পারেনি মানুষ। ৬৫ দিনে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫-৬ লক্ষ কোটি টাকার মত।
৭) করোনায় ছোঁয়াছে ভীতি প্রচারের কারণে মানুষের মাঝে মনুষ্যত্বের বিলুপ্তি ঘটেছে। এতে একজন মানুষ অন্য মানুষের সাহায্যার্থে, এমনকি নিজ পিতা-মাতার জন্য আপন সন্তানরা এগিয়ে আসছে না।
৮) লকডাউনের অর্থনৈতিক ক্ষতিতে প্রায় সকল রাষ্ট্রই বুঝতে পেরেছে, তাই সব দেশ লকডাউন তুলে নিচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বাংলাদেশে একটি মহল এখনও রাষ্ট্রকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে পুনরায় লকডাউন ও কারফিউ দেয়ার জন্য।
৯) সোশ্যাল ডিসটেন্সিং এর নামে এখন বিভিন্ন স্থানে হয়রানি করা হচ্ছে এবং মসজিদগুলোতে ফরজ নামাজে কাতারের মাঝে ফাকা রাখতে বলা হচ্ছে, যা শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। হ্যান্ড স্যানেটাইজার নামক নাপাক অ্যালকোহল দিয়ে হাত ধুইতে বাধ্য করা হচ্ছে। সুন্নতি মুসাফাহা-মুয়ানাকায় বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে, যা আমাদের দ্বীন ইসলাম পালনের ক্ষেত্রে মারাত্মক বাধাগ্রস্ত করেছে।
১০) ৩০ মিনিটের বেশী মাস্ক পড়ে থাকা ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। তারপরও মাস্ক না পড়লে ৬ মাসের জেল/জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে, যা মানুষকে আরো অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিবে। এছাড়া বিষাক্ত জীবানুনাশক যত্রতত্র ছিটানোর ফলে মানুষের শ্বাসযন্ত্র মারাত্বক বিষক্রিয়ার সম্মুখিন হয়েছে এবং হচ্ছে।
এমতাবস্থায় বিবৃতিদাতাদের বক্তব্য হলো-
ক) লকডাউন দিয়ে যদি সুস্থতা লাভ করা যেতো, তাহলে লকডাউন দেয়ার পরও কেন? ঔষধ খেতে হয় এবং ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হয়।
খ) করোনা ভাইরাসের সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ না করে কেন আমাদের জনগণের উপর ৬৫ দিনের লকডাউন, সোশ্যাল ডিসটেন্সসহ বিভিন্ন হাতুরে ডাক্তারি চাপিয়ে দেয়া হলো? যারা এ সকল ভ্রান্ত ব্যবস্থা প্রচার-প্রসার করে রাষ্ট্রকে তা গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে, তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।
গ) যারা নতুন করে যারা লকডাউন, কাউফিউ, গ্রিন-ইয়োলো-রেড জোনের দাবী তুলে জনগণকে নতুন করে ক্ষতিগ্রস্থ করতে চাইছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।
ঘ) ৬৫ দিনের লকডাউনে জনগণের ক্ষতি পূরণে; যারা এগুলোর পক্ষে কাজ করেছে তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে তা শোধ করা হোক।
ঙ) মাস্ক নিয়ে আইন, মসজিদে সোশ্যাল ডিসটেন্সিং এর নিয়মনীতি বাতিল করা হোক।
চ) যেসব মিডিয়া মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে তাদের নিষিদ্ধ করা হোক।
ছ) নতুন করে যেকোন প্রকার লকডাউন দেয়া বন্ধ করা হোক।
জ) দেশের অর্থনীতি রক্ষায় যেকোন পণ্য আমদানীর পরিবর্তে রপ্তানীমুখী নীতি গ্রহণ করে; সব ধরণের পণ্য দেশে উৎপাদনের দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হোক।
বিবৃতিদাতারা হলেন: মুহম্মদ আব্দুর রউফ, এডিসন গ্রুপ, মুহম্মদ সাইফুল হাবিব,ব্যবসায়ী, বগুড়া, মুহম্মদ কমল,ব্যবসায়ী, বগুড়া, মুহম্মদ আবুল কাশেম, ফার্মাসিষ্ট, মুহম্মদ এরশাদ, কিশোরগঞ্জ, মুহম্মদ বজলুর রহমান, শিক্ষক, মুহম্মদ দ্বীন ইসলাম, ক্যাশিয়ার, পেট্রোলিয়াম কোং, মুহম্মদ শাহদাত রহমান, ট্রান্সপোর্ট সুপার, মুহম্মদ মাহবুব বিল্লাহ,সাপ্লায়ার, মুহম্মদ মিন্টু,ব্যবসায়ী সহ মোট ৫৩০ জন ।